অনেকদিন চুপচাপ ছিলাম, বিভিন্ন কারণে।
এক, আমার ছোটো পিসি চলে গেলেন কিছুদিন আগে, আকস্মিক সেরিব্রাল অ্যাটাক । কয়েকদিন আগেও কথা বলেছেন আত্মীয়-স্বজনদের সাথে, খবরাখবর নিয়েছেন ... বলেছেন, 'অনেকদিন দেখিনা, একদিন আসো'! পিসেমশায় আমতার ইস্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন, হেডমাস্টার মানুষ যেমন হয় তেমনি, পুরু ফ্রেমের চশমা পরা, চোখের সামনে হয় আনন্দবাজার না হলে পরীক্ষার খাতা ... আর পিসিমণি ছিলো নরম-সরম, আদরের মানুষ, ছোটোবেলায় আমি তাঁর ডাকনাম রেখেছিলাম গদীপিসি।
বাবার কাছে গল্প শুনেছি, বন্যায় সব ভেসে গেছে, আর বাবা, আমার মামাকে নিয়ে সঙ্গে মাথায় পোঁটলা বেঁধে প্রাণ হাতে করে পৌঁছেছেন ছোড়দির বাড়ি ... শুনেছি পিসেমশাইয়ের শখ হয়েছিলো ভোটে দাঁড়াবেন নির্দল প্রার্থী হয়ে, পিসিমণি নিজের গয়না বাঁধা রেখে টাকা তুলেছেন জামানত-এর ... সেই মানুষ-টা বোধ হয় হঠাৎ একটা পছন্দের স্টেশন দেখে জীবনের ট্রেন থেকে নেমেই পড়লেন সবাইকে ফেলে ! আর এমন-ই দুর্যোগের দিনকালে, যে আমার অশীতিপর পিসেমশাই শেষকৃত্য সেরে বাড়ি ফিরলেন যে লকডাউনের দিনগুলিতে, সেদিন তাঁর পাশে এসে বসার অনুমতি নেই কারুর ... হ্যাঁ, ভালোর জন্য-ই, জানি, কিন্তু সেই ছায়াঘেরা ছোটবেলার স্মৃতির বাড়িতে এখন 'আছে শুধু নেই' অগুন্তি মৃত্যুর মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে নিজের শোক বড়ো অকিঞ্চিৎকর মনে হয়। তা হোক, ছোটোবেলায় যে তারস্বরে চেঁচিয়েছি সকাল সাতটার প্রেয়ারে ... 'মৃত্যোর্মা অমৃতংগময়', তার কী কিছুই ফল পাবো না?
আর দুই, ব্যস্ততা ... জীবনের গভীর শোকের দিনগুলিতে কোনো কবিতা নয়, উক্তি নয় ... কাজ, কাজ, কাজ, পাগলের মত কাজ-ই আমাকে বারবার টেনে তুলেছে ... গত দুই সপ্তাহ, এই আরকান্সা রাজ্যের একদল লোক, কেউ পাবলিক হেলথ এক্সপার্ট, কেউ এপিডেমিওলজিস্ট, একজন স্প্যাশিয়াল টেকনোলজি-র মহীরূহ, এঁরা সবাই মিলে দিন-রাত এক করে একটা দরকারী কাজ করছেন ! সবাই মিলে এনারা বোঝার চেষ্টা করছেন এই অঞ্চলের হাসপাতালের উপরে কতোটা চাপ পড়বে, কি করলে সেটা সামলানো যেতে পারে, ইত্যাদি ... সেখানে আমি যতটুকু পারি সাহায্য করছি, যা দু-পাতা পুস্তকস্থা তু যা বিদ্যা রয়ে গেছে তাই দিয়ে ! ( কতো লোকে যে এগিয়ে এসেছেন, কাঁধে-কাঁধ লাগিয়ে লড়ছেন, সেটা ভাবলে এই মৃত্যু উপত্যকার দাঁড়িয়েও ইচ্ছে করে একটা বড়ো শ্বাস নিতে ... খুব ভয় করে বাড়ির লোকেদের জন্য, পাগলের মতো ভয়, ভবিষ্যত ভয়ানক অনিশ্চিত মনে হয়। এই বিশাল মৃত্যুর মিছিলের বোঝা চেপে ধরে দশদিক থেকে... আর ধুলোর মধ্যে, খিদের মধ্যে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে হেঁটে যেতে যেতে সেই মিছিলের শিশুরা জিগ্যেস করে, লগ-স্কেলে আঁকবো, না লিনিয়ার? ... কিন্তু এই যে মোমবাতিটুকু কাঁপছে ঝোড়ো হাওয়ায়, এইটুকু দুই হাত দিয়ে আগলে রাখা দরকার ... যদ্দিন হাত দুখানা আছে ...
বাবার কাছে গল্প শুনেছি, বন্যায় সব ভেসে গেছে, আর বাবা, আমার মামাকে নিয়ে সঙ্গে মাথায় পোঁটলা বেঁধে প্রাণ হাতে করে পৌঁছেছেন ছোড়দির বাড়ি ... শুনেছি পিসেমশাইয়ের শখ হয়েছিলো ভোটে দাঁড়াবেন নির্দল প্রার্থী হয়ে, পিসিমণি নিজের গয়না বাঁধা রেখে টাকা তুলেছেন জামানত-এর ... সেই মানুষ-টা বোধ হয় হঠাৎ একটা পছন্দের স্টেশন দেখে জীবনের ট্রেন থেকে নেমেই পড়লেন সবাইকে ফেলে ! আর এমন-ই দুর্যোগের দিনকালে, যে আমার অশীতিপর পিসেমশাই শেষকৃত্য সেরে বাড়ি ফিরলেন যে লকডাউনের দিনগুলিতে, সেদিন তাঁর পাশে এসে বসার অনুমতি নেই কারুর ... হ্যাঁ, ভালোর জন্য-ই, জানি, কিন্তু সেই ছায়াঘেরা ছোটবেলার স্মৃতির বাড়িতে এখন 'আছে শুধু নেই' অগুন্তি মৃত্যুর মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে নিজের শোক বড়ো অকিঞ্চিৎকর মনে হয়। তা হোক, ছোটোবেলায় যে তারস্বরে চেঁচিয়েছি সকাল সাতটার প্রেয়ারে ... 'মৃত্যোর্মা অমৃতংগময়', তার কী কিছুই ফল পাবো না?
আর দুই, ব্যস্ততা ... জীবনের গভীর শোকের দিনগুলিতে কোনো কবিতা নয়, উক্তি নয় ... কাজ, কাজ, কাজ, পাগলের মত কাজ-ই আমাকে বারবার টেনে তুলেছে ... গত দুই সপ্তাহ, এই আরকান্সা রাজ্যের একদল লোক, কেউ পাবলিক হেলথ এক্সপার্ট, কেউ এপিডেমিওলজিস্ট, একজন স্প্যাশিয়াল টেকনোলজি-র মহীরূহ, এঁরা সবাই মিলে দিন-রাত এক করে একটা দরকারী কাজ করছেন ! সবাই মিলে এনারা বোঝার চেষ্টা করছেন এই অঞ্চলের হাসপাতালের উপরে কতোটা চাপ পড়বে, কি করলে সেটা সামলানো যেতে পারে, ইত্যাদি ... সেখানে আমি যতটুকু পারি সাহায্য করছি, যা দু-পাতা পুস্তকস্থা তু যা বিদ্যা রয়ে গেছে তাই দিয়ে ! ( কতো লোকে যে এগিয়ে এসেছেন, কাঁধে-কাঁধ লাগিয়ে লড়ছেন, সেটা ভাবলে এই মৃত্যু উপত্যকার দাঁড়িয়েও ইচ্ছে করে একটা বড়ো শ্বাস নিতে ... খুব ভয় করে বাড়ির লোকেদের জন্য, পাগলের মতো ভয়, ভবিষ্যত ভয়ানক অনিশ্চিত মনে হয়। এই বিশাল মৃত্যুর মিছিলের বোঝা চেপে ধরে দশদিক থেকে... আর ধুলোর মধ্যে, খিদের মধ্যে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে হেঁটে যেতে যেতে সেই মিছিলের শিশুরা জিগ্যেস করে, লগ-স্কেলে আঁকবো, না লিনিয়ার? ... কিন্তু এই যে মোমবাতিটুকু কাঁপছে ঝোড়ো হাওয়ায়, এইটুকু দুই হাত দিয়ে আগলে রাখা দরকার ... যদ্দিন হাত দুখানা আছে ...
No comments:
Post a Comment